বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (BFSA) এর সংবাদ সম্মেলন! (হাকিমপুরী, শাহজাদী ও রতন জর্দাসহ দেশের ২২টি জর্দা, খয়ের ও গুলে মানব দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বিষাক্ত হেভি কেমিক্যাল লেড, ক্যাডমিয়াম ও ক্রোমিয়াম এর উপস্থিতির ল্যাব রিপোর্ট সংক্রান্ত)
প্রকাশন তারিখ
: 2019-10-31
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (BFSA) এর সংবাদ সম্মেলন! (হাকিমপুরী, শাহজাদী ও রতন জর্দাসহ দেশের ২২টি জর্দা, খয়ের ও গুলে মানব দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বিষাক্ত হেভি কেমিক্যাল লেড, ক্যাডমিয়াম ও ক্রোমিয়াম এর উপস্থিতির ল্যাব রিপোর্ট সংক্রান্ত)
বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে পান। পানের সঙ্গে শখ করে মানুষ নানা ধরনের তামাকপাতা- জর্দা ও খয়ের খেয়ে থাকেন। হাকিমপুরী, শাহজাদী ও রতন জর্দাসহ দেশের ২২টি জর্দা, খয়ের ও গুলে মানব দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বিষাক্ত হেভি কেমিক্যাল লেড, ক্যাডমিয়াম ও ক্রোমিয়াম পেয়েছে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ)।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর ইস্কাটনে বিএফএসএ’র এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। এসব ব্রান্ডের পান অনুষঙ্গ দীর্ঘদিন খাওয়ার কারণে মাড়ি ও লিভার ক্যান্সারের মতো জটিল রোগ হতে পারে উল্লেখ করে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ থেকে জানানো হয়, হকিমপুরী, শাহজাদী ও রতন জর্দাসহ দেশের ২২টি জর্দা গুল ও খয়েরে বিষাক্ত হেভি ক্যামিকেল লেড, ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়াম পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১৩ প্রতিষ্ঠানের জর্দা, ৬ প্রতিষ্ঠানের খয়ের ও তিন প্রতিষ্ঠানের গুলের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। যার সবগুলোতে হেভি ক্যামিকেল লেড, ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়াম এর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।
নমুনা পরীক্ষা করা পণ্য গুলোর মধ্যে রয়েছে, গিলা খয়ের, তীর মার্কা খয়ের, মালাই খয়ের, অন্তরা খয়ের, কালো পাথর বাল্ক খয়ের, সাদা বাল্ক খয়ের, ইগল গুল, মোস্ফফা গুল, শাহজাদা গুল, রতন জর্দা, হকিমপুরী জর্দা, গুরুদেব জর্দা শাহজাদি জর্দা (নির্মলের), মহিউদ্দিন জর্দা, হাকিমপুরী জর্দা, ঢাকা জর্দা, মকিমপুর জর্দা, শাহী হীরা জর্দা, জাফরানী জর্দা শাহজাদী জর্দা (আলম), বউ শাহজাদী জর্দা এবং চাঁদপুরী জর্দা।
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে জানানো হয়, যারা পানের সঙ্গে খয়ের খান তাদের জন্য রয়েছে আরও বড় দুঃসংবাদ। কারণ এক ধরনের গাছের বাকল থেকে এই পণ্যটি তৈরির কথা থাকলেও সেটি কোনো কোনো ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ক্যামিকেল রং দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা গেছে ফার্নিচারের বার্ণিশে ব্যবহারের জন্য যেসব কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় সেগুলো দিয়েই সরাসরি খয়ের তৈরি হচ্ছে। যার মধ্যে ক্ষতিকর ভারী ধাতু লেড, ক্রোমিয়াম ও ক্যাডমিয়ামের মতো পদার্থ পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (BFSA) এর চেয়ারম্যান সৈয়দা সারওয়ার জাহান জানান, দেশের অনেক মানুষ পান জর্দায় আসক্ত। কিন্তু এই জর্দা খয়ের বা গুল পরীক্ষা করে দেখা গেছে এগুলোতে ক্ষতিকর ধাতু রয়েছে। যা নিয়মিত খেলে ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। তিনি আরো জানান, বাজারে বিক্রি হচ্ছে এমন ২২টি ব্র্যান্ডের জর্দা গুল ও খয়েরে নমুনা নিয়ে ল্যাবে টেস্ট করা হয়। যার প্রত্যেকটিতে বিষাক্ত হেভি ক্যামিকেল লেড, ক্যাডমিয়াম ও ক্রোমিয়াম পাওয়া গেছে। যা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তিনি জানান আমরা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থায় যাচ্ছি। প্রথমে আমরা তাদের ডাকবো। তাদের সমস্যার কথা জানিয়ে সংশোধন করতে বলা হবে। এরপর যদি তারা সংশোধন না হন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রয়োজনে প্রতিষ্ঠান সিলগালা করা হবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, তীর মার্কা খয়েরে ক্ষতিকর লিড পাওয়া গেছে ২৩.৭৪ মিলিগ্রাম, ক্যাডমিয়াম ও ক্রেমিয়াম পাওয়া গেছে যথাক্রমে ০.০৬ ও ১.৩৫ মিলিগ্রাম। একইভাবে মালাই খয়েরে ৫.৫৮ মিলিগ্রান, ক্যাডমিয়াম ০.১১ মিলিগ্রাম ও ক্রোমিয়াম ১৭.০৫ মিলিগ্রাম পাওয়া গেছে। এছাড়া কালো পাথর বাল্ক খয়েরে লিড পাওয়া গেছে ৫.৯৮ মি:গ্রাম, ক্যাডমিয়াম ০.০৬ ক্রোমিয়াম পাওয়া গেছে ৬.৭৫ মিলিগ্রাম। এছাড়া হকিমপুরি জর্দায় লিড ২৩.৭৪ মিলিগ্রাম, ক্যাডমিয়াম ০.০৬ মিলিগ্রাম,ক্রোমিয়াম ১.৩৫ মিলিগ্রাম, শাহজাদি জর্দায় লিড ০.২ মিলিগ্রাম ক্যাডমিয়াম ০.৭১ মিলিগ্রাম ক্রোমিয়াম ০.৯৪ মিলিগ্রাম, চাঁদপুরী জর্দায় লিড ০.৪৯ ক্যাডমিয়াম ১.০৫ ক্রোমিয়াম ২.১৫ মিলিগ্রাম। মকিমপুরী জর্দায় লিড ০.২ মিলিগ্রাম ক্যাডমিয়াম ০.৮৯ মিলিগ্রাম ক্রোমিয়াম ১.১৪ মিলিগ্রাম, শাহী হীরা জর্দায় লিড ০.২ মিলিগ্রাম,ক্যাডমিয়াম ০.৯৫ মিলিগ্রাম ক্রোমিয়াম ১.২৫ মিলিগ্রাম, শাহজাদী (আলম) জর্দায় লিড ০.২ ক্যাডমিয়াম ১.১৫ ক্রোমিয়াম পাওয়া গেছে ১.১৭ মিলিগ্রাম।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্যবৃন্দও বক্তব্য রাখেন।আর অত্যন্ত স্বল্পসময়ে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সাংবাদিকবৃন্দকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানানো হয়।এবং ভবিষ্যতেও যেন ‘জীবন ও স্বাস্থ সুরক্ষায় নিরাপদ খাদ্য’ এ অভিলক্ষ্যকে বাস্তবায়নের জন্য সাংবাদিক সমাজ এমনিভাবে এগিয়ে আসেন সেজন্য চেয়ারম্যান মহোদয় উদাত্ত আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্যবৃন্দ, পরিচালকবৃন্দ, উপসচিবগণ এবং অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।